২০১৩ সালে মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে করা মামলায় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন। এদিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রায় পড়া শুরু করেন বিচারক। এটা ছিল তথ্যপ্রযুক্তি আইনের প্রথম মামলা।
এদিন রায় পর্যবেক্ষণ করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন পর্যবেক্ষক আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৪ আগস্ট রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত। এদিন জামিনে থাকা দুই আসামি আদালতে উপস্থিত হন। তাদের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণার জন্য ৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়।
এদিকে, ৭ সেপ্টেম্বর মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য থাকলেও রায় প্রস্তুত না হওয়ায় ১৪ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার জন্য নতুন দিন ধার্য করেন আদালত।
২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঐ অভিযানে ৬১ জন নিহত হয় বলে দাবি করে অধিকার। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই সংখ্যাটি ১৩ বলে জানানো হয়।
এ ঘটনাটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে ঐ বছরের ১০ জুন সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।
তদন্ত শেষে ঐ বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ঐ বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে।
পাশাপাশি তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ঐ আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর টেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫০৫ সি ও ডি এবং ৫০৫ এ ধারায় অপরাধ।’
Leave a Reply