দৈনিক শিক্ষা নিউজ : ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস পালিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ২০২০-এর প্রতিপাদ্য : ‘জনমানুষ, ধরিত্রী, সমৃদ্ধি ও শান্তির জন্য শিক্ষা’। এর মূল কথা হল- শিক্ষার সমন্বিত প্রকৃতি, মানবতাবাদী লক্ষ্য, যৌথ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন। পেশাগত ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনসহ শিক্ষা অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য হ্রাস করা গেলে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর শোভন কর্মে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ অবারিত হয়। ইউনেস্কোর বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসডিজি ৪ অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সবাই মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করতে পারলে দারিদ্র্য অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব।
ব্যক্তি উপার্জন বৃদ্ধির সঙ্গে শিক্ষার সুনির্দিষ্ট সংযোগ রয়েছে। বিশ্বের ১৩৯টি দেশে দেখা যায়, যেখানেই অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলজীবন শেষ করতে পারে, সেখানেই আয় বৃদ্ধি নিশ্চিত হয়। এ ক্ষেত্রে যেসব দরিদ্র দেশে দক্ষ কর্মীর সংকট রয়েছে, সেখানে এ আয় বৃদ্ধির হার বেশি।
বাংলাদেশে দক্ষতার সংকট থেকে বের হয়ে আসতে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তারা বেশ কিছুদিন ধরে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় এবং দেশ-বিদেশের শ্রমবাজারের সঙ্গে গভীর সংযোগ, বিশেষ করে প্রচলিত শিক্ষা কর্মসূচির সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যের চাহিদা যুক্ত করার বিষয়টি এখনও আশানুরূপ বলা যায় না।
জীবন-জীবিকার বাস্তবতার সঙ্গে শিক্ষার বিচ্ছিন্নতা এখনও বহুল আলোচিত নয়। মানব উন্নয়ন, মানবতা ও মাতৃভূমির শেকড় সন্ধান থেকে দূরে অবস্থিত শিক্ষা, কায়িক শ্রমকে উপেক্ষা, কর্মসংস্থানের সঙ্গে সম্পর্কহীন শিক্ষা মানবসম্পদের ব্যাপক অপচয়কে নির্ভুলভাবে তুলে ধরলেও নীতিপ্রণেতা, পরিকল্পনাবিদদের তাতে হুঁশ নেই।
কর্মমুখী শিক্ষার নামে প্রচলিত শিক্ষা বাস্তবে গতানুগতিক ও সেকেলে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক সভায় প্রচলিত কারিগরি শিক্ষা ঢেলে সাজিয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথা বলেছেন। তার বক্তব্য সময়োপযোগী। তবে দুঃখ হয় যখন দেখি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ সুনির্দিষ্ট উল্লেখ সত্ত্বেও এখনও দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে পারল না।
ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশে দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচি হাতে নেয়া হলেও মূল কাজ শিক্ষায় বৈষম্য মোচনে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চেয়ে ধনী মানুষদের সন্তানদের শিক্ষায় সরকার বেশি ব্যয় করে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আশা করব আগামী বাজেটে শিক্ষায় বৈষম্য হ্রাসে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ থাকবে।
বাংলাদেশে ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস বেসরকারিভাবে উদযাপিত হয়। জাতিসংঘ ঘোষিত ২৪ জানুয়ারির আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস এর সঙ্গে যুক্ত হল। আশা করব, দুটো দিনই আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করব। দিবসটি আনুষ্ঠানিকতার ঊর্ধ্বে থেকে সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণে সার্থক হয়ে উঠুক।
অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ : জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য
Leave a Reply