আমদানির খবরে বাজারে প্রতি পিস ডিম এবার ১২ টাকায় মিলছে। ক্রেতারা প্রতি হালি ডিম ৪৮-৫২ টাকায় কিনতে পারছেন। বিক্রেতার শঙ্কা ডিম আমদানি হলে দাম আরও কমবে। সোমবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এটি জানা গেছে।
এদিকে ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ভারত থেকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যে চারটি কোম্পানিকে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তারা হলো মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড।
সোমবার নিজ কার্যালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের জানান, গত মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সাড়ে ১০ টাকা উৎপাদন খরচ। খুচরা পর্যায়ে বিক্রির জন্য ১২ টাকা। খুচরা পর্যায়ে এ দামে বিক্রি হচ্ছে না বলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেখতে পেয়েছে। এজন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে আমরা কিছু ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি।
সচিব আরও বলেন, আপনারা জানেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিম লাগে। সেক্ষেত্রে আমরা একদিনের ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এটা মার্কেটে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে কিংবা আমাদের খামারিরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছি না।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। এসব পণ্য হলো-ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ। প্রতিটি ডিমের বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ টাকা।
ডিম আমদানি করার ক্ষেত্রে চারটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর প্রথমটি হলো, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুমুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমদানি করা ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের দেওয়া এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস ও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সনদ দাখিল করতে হবে। এছাড়া নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করা যাবে না এবং সরকারের অন্যান্য বিধিবিধান প্রতিপালন করতে হবে এমন দুটি শর্তের কথা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানির খবরটি সোমবার সকাল থেকে ব্যাপক হারে রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরে খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৩ টাকা। যা একদিন আগে রোববার বিক্রি হয়েছে সর্বনিু ১৩ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা। আর মাসখানেক আগে এই ডিম ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এই ডিম দুই মাস আগেও প্রতি পিস ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে দাম কমার এই চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে। টিসিবি বলছে, সোমবার প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫২ টাকা। এতে প্রতি পিসের দাম হয় ১২-১৩ টাকা। সাত দিন আগে প্রতি হালি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৩ টাকা। আর এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৩-৫৫ টাকা।
রাজধানীর নয়াবাজারে ডিম কিনতে আসা মো. আলাউদ্দিন বলেন, আজ কী এমন আলাদিনের চেরাগ হলো যে ডিমের দাম ১২ টাকায় নেমে এসেছে? এই একই ডিম গত কয়েকদিন আগেও ১৫ টাকায় কিনতে হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যে যার মতো দাম বাড়িয়ে ক্রেতার পকেট কেটেছে। একই বাজারে ডিম বিক্রেতা মো. হুসাইন আলী বলেন, আড়তে দাম বাড়ানোর জন্য খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৫ টাকা হয়। অভিযানের ফলে আড়তে পিসপ্রতি ১ টাকা কমানোর জন্য খুচরা পর্যায়ে দাম ১৩-১৪ টাকায় নেমে আসে। তবে রোববার পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারিনি। কিন্তু আজ আড়তে দাম আরও এক টাকা কমানোর জন্য সরকার নির্ধারিত দাম ১২ টাকায় কিছু ডিম বিক্রি হচ্ছে। তবে ১৩ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। দফায় দফায় ডিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অধিদপ্তরের সভা করা হয়। ডিমের দাম বাড়ানোর পেছনে কারা দায়ী তা চিহ্নিত হয়। তারপরও তাদের কোনো ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হয় না। বাজারে দামে হেরফের পাওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের নামমাত্র জরিমানা করা হয়। তারপরও দাম কমানো যায় না। পরে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্যমন্ত্রী। তবে অভিযান পরিচালনা করেও সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। রোববার পর্যন্ত প্রতি পিস বিক্রি হয়েছে ১৩-১৪ টাকা।
Leave a Reply