জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে সংসদে বিল পাস করা হয়েছে। বিলের বিধান অনুযায়ী, আগামীতে জন্মের পর একটি স্বতন্ত্র আইডি নম্বর পাবেন দেশের সব নাগরিক। এ সংক্রান্ত কাজের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে একটি পৃথক ‘নিবন্ধকের কার্যালয়’ স্থাপন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে।
বিলে এনআইডি সংক্রান্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বুধবার ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু’র সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২৩’ নামের বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।
এর আগে বিলের উপর বিরোধীদলীয় সদস্যদের জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নিষ্পত্তি করেন স্পিকার। গত ৪ সেপ্টেম্বর সংসদে বিলটি উত্থাপন করা হয়।
সংসদে উত্থাপিত বিলে বলা হয়, একজন নাগরিককে নিবন্ধক কর্তৃক কেবল একটি জাতীয় পরিচিতি নম্বর প্রদান করা যাবে, যাহা ঐ নাগরিকের একক পরিচিতি নম্বর হিসাবে সর্বত্র ব্যবহৃত হবে। এর অধীন প্রদত্ত জাতীয় পরিচিতি নম্বরের ভিত্তিতে একজন নাগরিককে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, প্রয়োজনীয় তথ্য-সংবলিত একটি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন রেজিস্টার থাকবে।
বিলে আরো বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিক নির্ধারিত পদ্ধতি ও শর্ত সাপেক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জাতীয় পরিচিতি নম্বর পাওয়ার অধিকারী হবেন। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একজন নিবন্ধক থাকবে। নিবন্ধক সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবে এবং তাহার চাকরির শর্তাদি সরকার কর্তৃক স্থিরীকৃত হবে। নিবন্ধক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সব দায়িত্ব পালন করবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-উপাত্তের সংশোধনের প্রয়োজন হলে নাগরিক কর্তৃক প্রদত্ত আবেদনের ভিত্তিতে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফি প্রদান সাপেক্ষে, নিবন্ধক কর্তৃক তা সংশোধন করা যাবে।
বিলে অপরাধ ও শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে। এই অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এছাড়া ‘কোনো নাগরিক জ্ঞাতসারে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং ঐ অপরাধের জন্য এক বছর অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে বিলে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী অথবা এই আইন দ্বারা বা ইহার অধীন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনরত কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিবন্ধকের নিকট সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কোনো তথ্য-উপাত্ত বিকৃত বা বিনষ্ট করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং ঐ অপবাদের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে বা ঐ পরিচয়পত্র বহন করলে একই শাস্তি পাবেন।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি তথ্য-উপাত্তে অননুমোদিত প্রবেশ করিলে বা বেআইনিভাবে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করিলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে এবং ঐ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
নিবন্ধন কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মচারী বা উহার প্রতিনিধির অপরাধের জন্য একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাধ্যমে পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত সেবাটি জনগণের নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন। এই আইনটি নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে নাগরিকের নিবন্ধিত হওয়ার এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
Leave a Reply