সম্প্রতি (২৩ আগস্ট) চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) চন্দ্রযান-৩। শুধু ভারত নয়, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর অভিযান নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে ঘিরে কেন এত রহস্য? কী আছে সেখানে? কেনইবা সবাই দক্ষিণ মেরুতে অভিযান চালাতে চায়?
অনেক আগেই চাঁদে পাড়ি জমিয়েছে মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে হচ্ছে নানামুখী গবেষণা। বর্তমানে মানুষ চাঁদে বসতি বানাতে চাচ্ছে। মানুষ সেখানে থাকতে চায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা চাঁদের কোনো এক অংশে যদি পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায় তবে সেখানে বসবাস করতে পারবে মানুষ এবং চাঁদ থেকে সংগ্রহ করা যাবে মূল্যবান খনিজ পদার্থ। তখন অভিযান চালানো যাবে মঙ্গল গ্রহেও।
চাঁদে যদি পানি পাওয়া যায়, তাহলে সেখানে অভিযানের গতি আরো বেড়ে যাবে। চাঁদের পানি ভেঙে জ্বালানির জন্য হাইড্রোজেন ও শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার জন্য অক্সিজেনে রূপান্তরিত করা যাবে। চাঁদে খননকাজ করাসহ মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার জন্যও কাজে আসবে এই পানি।
চাঁদের দক্ষিণ মেরু চাদের অন্যসব অংশের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চাঁদের এই মেরুতে গভীর খাঁদ ও গর্ত রয়েছে। চাঁদের এই মেরুতে অভিযান করতে গিয়ে অনেক নভোচারী ব্যর্থ হয়েছেন। গত ২০ আগস্ট রুশ মহাকাশযান লুনা-২৫ চাদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযান পরিচালনার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চাঁদের বুকে ভূপাতিত হয়েছে।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে চাঁদে কি আসলেই পানির অস্তিত্ব রয়েছে কি না এ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই মানুষের। অনেক বিজ্ঞানী ও গবেষণা সংস্থা এ প্রশ্নের উত্তর জানতে নিরলস গবেষণা করে চলেছেন। ১৯৬০-এর দশকে অ্যাপোলো অভিযানের সময় বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, চাঁদে পানি থাকলেও থাকতে পারে। ১৯৭০-এর দশকে অ্যাপোলো অভিযানের সময় বিজ্ঞানীরা চাঁদ থেকে নানান উপাদান সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। ২০০৮ সালে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেসব উপাদান পরীক্ষা করলে তাতে হাইড্রোজেনের উপস্থিতি পান। ২০০৯ সালে ভারতের প্রথম চন্দ্র অভিযানে চন্দ্রযান-১ এ থাকা নাসার যন্ত্রের মাধ্যমে চাঁদে পানি শনাক্ত হয়। সে বছরই নাসার গবেষকরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পানির খোঁজ পান। এর আগে, ১৯৯৮ সালে লুনার প্রসপেক্টর-এক চন্দ্রাভিযানে প্রমাণ মেলে যে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে থাকা ছায়াযুক্ত গর্তগুলোতে পানি ও বরফের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এসব অন্ধকার ছায়াযুক্ত অঞ্চলে ২০২৪ সালে অভিযান চালাবে নাসা। ভাইপার নামের সেই অভিযানে সেসব অন্ধকার গর্তে আলো ফেলে এর রহস্য উন্মোচন করা হবে। সেসব গর্তে আসলেই পুরোটা বরফ নাকি বালির সাথে মিশানো ক্রিস্টাল তা জানা যাবে। ফলে চাঁদের এই মেরুকে ঘিরে প্রতিযোগিতার শেষ নেই। এই মেরুতে ভারত ও জাপান যৌথ খরচে অভিযান পাঠাবে বলেও শোনা যাচ্ছে।
Leave a Reply