দৈনিক শিক্ষা নিউজ প্রতিবেদন : আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের এতটুকু স্বার্থ আমার জীবন থাকতে কারও হাতে তুলে দেবো না। কেউ দেশের স্বার্থ নষ্ট করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। বঙ্গবন্ধুর সন্তান দুর্নীতি করে টাকা আয় করতে ক্ষমতায় আসেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট দেওয়া ও সাংবিধানিক অধিকার আওয়ামী লীগই নিশ্চিত করেছে। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছি। তাদের আর্থিক সক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে দিয়েছি। তারা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছি। সবাইকে ভোটার আইডি কার্ড করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গোটা বিশ্ব আজ এক অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মহামারির কবলে পড়ে বিশ্ব। ২০২০ এবং ২০২১ এই দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ে।’
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির সেই ক্ষতি কাটিয়ে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়; সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভয়ংকর অর্থনৈতিক যুদ্ধ। অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাব কোনো একক দেশের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
এ সময় করোনাকালে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের প্রাণহানি যেমন কমাতে পেরেছি, তেমনি অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তাঁদের জীবিকা সচল রাখা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমরা জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ হাজার শয্যা বৃদ্ধি করেছিলাম। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য পিপিই, রোগীর জন্য অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, জরুরি ওষুধসহ সকল উপকরণ সরবরাহ করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, টিকা পাওয়ার উপযোগী সবাইকে বিনা মূল্যে প্রায় ৩৪ কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ প্রথম ডোজ, ১২ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার দ্বিতীয় ডোজ এবং ৬ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২২ হাজার ডাক্তার এবং ৪০ হাজার নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পকারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তার জন্য এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন–ভাতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষকে দুই দফায় আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন যানবাহনের শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক, ইমাম, মুয়াজ্জিন, সংস্কৃতি কর্মীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। বস্তিবাসী, দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ যাঁরা অন্যের কাছে হাত পাততে পারেন না, হটলাইনে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ঘরে চাল-ডালসহ খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
করোনার মহামারির সময় প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮১ হাজার ২৬৬টি।
সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই সাধারণ মানুষের কল্যাণে জন্য কাজ করে থাকে। আমরাই ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ প্রান্তিক মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাতা চালু করেছিলাম। এসব ভাতাভোগীর সংখ্যা এবং টাকার পরিমাণ উভয়ই বৃদ্ধি করা হয়েছে। সমাজের সকল অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ যেমন হিজড়া, বেদে, হরিজন, সুইপার, চা শ্রমিক- এদের জন্য বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ভাতা ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ উপকৃত হচ্ছেন।
এ সময় সারাদেশের ৮ টি সম্মেলনের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১০টি জেলা বাদে সারাদেশের সবকটি জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। তিনি দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য তিনি সেটা পারেননি। আমরা সেটা করছি।
Leave a Reply