দৈনিক শিক্ষা নিউজ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া সেই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তার নাম শাকিল আহমেদ রুবেল (২৮)। তার বিরুদ্ধে আরও অর্ধশতাধিক তরুণীকে অপহরণ করে তাদের জিনিসপত্র ছিনতাই ও অশালীন আচরণ করার অভিযোগ রয়েছে।
শনিবার রাতে রাজধানীর একটি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য দেন সংস্থাটির প্রধান হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, রুবেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত ছয়টি মামলা রয়েছে। তিনি গত ১০ বছরে দেড় হাজারের মতো ছিনতাই করেছেন। অর্ধশতাধিক মেয়েকে অপহরণ করে তাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন।
ডিবি প্রধান বলেন, স্থায়ী ঠিকানায় তার এখন পর্যন্ত তিনটা জায়গার নাম পাওয়া গেছে। তিনি একজন ‘মনুষ্যত্বহীন’ ব্যক্তি। তার কৌশলই ছিল স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অপহরণ করে ছিনতাই ও অশালীন আচরণ করা।
হারুন বলেন, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার পর ওই শিক্ষার্থীরা বিষয়টি পুলিশকে জানান না। অপহরণ, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল, ব্যাগ খোয়া ও অশ্লীল আচরণ করা হলেও লোকলজ্জার ভয়ে তারা বিষয়টি গোপন করতেন। এতে রুবেলের আসল অপরাধটি অধিকাংশ সময় ঢাকা পড়ে যেত।
সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীটিকে পুলিশ পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। তার কোমরে পিস্তল ছিল। হাতে ছিল ওয়াকিটকি। এ ঘটনার কয়েকদিন আগে পুলিশ পরিচয়ে বরিশালে আরেক মেয়েকে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এর আগে পূর্বাচল, গাজীপুর, উত্তরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফরিদপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকায় নারীকে অপহরণ করার কথা স্বীকার করেছেন রুবেল।
ঢাকায় তার কোনো স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। হোটেলে হোটেলে থাকতেন। ১৫ আগস্ট ওই ছাত্রীকে অপহরণের সময় যে মোটরসাইকেলটি রুবেল ব্যবহার করেছিলেন, সেটি ১২ আগস্ট উত্তরা এলাকা থেকে ছিনতাই করেন বলেও জানান ডিবি প্রধান। রুবেল ষষ্ট শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এখন পর্যন্ত তার তিনজন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছেন। তারা হলেন, আকাশ, দেলোয়ার ও হাবিব। তারা বিভিন্ন সময়ে রুবেলের চোরাই পণ্য কিনে তাকে সহযোগিতা করতেন।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনুরোধ করেছেন, রাস্তায় কেউ পুলিশ পরিচয়ে মোটসাইকেলে করে ধরে নিতে চাইলে সতর্ক হতে হবে। তাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। পুলিশ এভাবে ধরে নেয় না। প্রয়োজন হলে অশপাশের লোকজন জড়ো করে বিষয়টা জানাতে হবে।
“যেভাবে তুলে নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনায় আরও কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, অপহরণকারী লাল হেলমেট ও খয়েরি রঙের জামা পরা ছিলেন। ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে কল্যাণপুরে নামার পরই একটি মোবাইল ফোন রিচার্জের দোকানে ঢোকেন ওই ছাত্রী। রিচার্জ করার পর তিনি বের হয়ে যান। ওই দোকান থেকেই তাঁকে অনুসরণ করছিলেন অপহরণকারী। রিকশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী বাসার উদ্দেশে যাওয়ার সময় তাঁর গতিরোধ করেন পুলিশ পরিচয়ধারী। এ সময় তরুণীর হাতে ছিল একাধিক ব্যাগ ও একটি পুতুল। নিজের জন্মদিন উপলক্ষে এসব উপহার বন্ধুরা তাঁকে দিয়েছিলেন।
ফুটেজ বিশ্নেষণ ও তদন্তে উঠে আসে- হাতে থাকা ব্যাগ দেখিয়ে তার ভেতরে অবৈধ জিনিসপত্র আছে বলে ফাঁদ পাতেন পুলিশ পরিচয় দেওয়া ওই দুর্বৃত্ত। তখন তাঁর সঙ্গে ওই ছাত্রী সাত মিনিট তর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলা হয়, ‘থানায় গিয়ে মুচলেকা দিতে হবে। সেখানে আপনার ব্যাগ খোলা হবে। বন্ধুরা আপনাকে অবৈধ জিনিসপত্র দিয়েছেন।’ তখন মেয়েটি বলছিলেন- এসব জন্মদিনের উপহার। তখন অপহরণকারী বলছিলেন, ‘আপনার হাতে থাকা ক্যাডিবিয়ারের ভেতরে অবৈধ জিনিস আছে। থানায় নেওয়ার পর ক্যাডিবিয়ার কেটে আপনার সামনেই ওই অবৈধ জিনিস বের করা হবে।’ তখন রিকশাচালক বলছিলেন, ‘পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা মেটান আপা। আমাকে ছেড়ে দেন।’ এরপরই ঢাবি ছাত্রী পুলিশের স্টিকার লাগানো মোটরসাইকেলে উঠে বসেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেন, অপহরণকারীকে ধরতে একাধিক জাল পাতা হয়েছে। তাঁকে আমরা শনাক্তও করতে পেরেছি। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব। সিসিটিভির ফুটেজও পর্যালোচনা করেছি।
সুত্র : সমকাল
Leave a Reply