সামান্য বিনিয়োগে কোটিপতি হওয়ার লোভ দেখিয়ে হাজার হাজার মানুষকে সর্বস্বান্ত করে দুবাইভিত্তিক অ্যাপস ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ ইনকরপোরেটেড (এমটিএফই)। এর প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লায়। প্রতারণার টাকায় তিনি দেশ-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের (ইন্টারপোল) সহায়তা নেয়া হবে।
বর্তমানে মাসুদ ও হৃদয় দুবাইতে অবস্থান করছেন। অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা মাসুদের বিষয়ে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাসুদ শুরুতে দুবাই ও কানাডাভিত্তিক এমটিএফই’র একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী ছিলেন। আইটি বিষয়ে দক্ষ মাসুদ পরে নিজেই দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একই নামে অ্যাপস চালু করেন। এক্ষেত্রে মাসুদের অন্যতম সহযোগী ছিলেন কুমিল্লার হৃদয়। এ ডিজিটাল অ্যাপে বিনিয়োগকারীদের সবাই মাসুদ ও তার সহযোগীদের প্রতারণার শিকার।
কোটিপতি হওয়ার লোভে পড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষের কোটি কোটি টাকা খোয়া গেছে। শুধু তাই নয়, মাসুদের মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হয়েছে হাজার কোটি টাকা।
পুলিশ সদরদফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) শাখা জানায়, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেকোনো অপরাধী বিদেশে অবস্থান করলে ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়া হয়। ইন্টারপোলের সহায়তা নেয়ার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এমটিএফই’র মূল হোতা মাসুদকে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে মাসুদের বিষয়ে অবহিত করা হবে।
গত ১৭ আগস্ট হঠাৎ এমটিএফই’র অ্যাপ বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ মানুষের বিনিয়োগ করা অর্থ উধাও হয়ে যায়। উল্টো তাদের ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিয়েছে এমটিএফই। বাংলাদেশ ছাড়াও নাইজেরিয়া ও শ্রীলংকার অসংখ্য মানুষও বিনিয়োগ করেন এ প্ল্যাটফর্মে। এটি অনেকটা পঞ্জি স্কিমের মতোই ছিল। বিনিয়োগকারীরা নতুন কাউকে দিয়ে বিনিয়োগ করাতে পারলে অতিরিক্ত বোনাস দেওয়ার মতোও অফার ছিল এমটিএফই’র।
এমটিএফই অ্যাপে যুক্ত প্রত্যেকেই ৬১, ২০১, ৫০১, ৯০১ ও ২ হাজার ডলার ডিপোজিট করেন। বেশি টাকা আয় করতে কেউ কেউ ৫ হাজার ডলারের বেশিও বিনিয়োগ করেছেন। কেউ জমানো টাকা বিনিয়োগ করেছেন, কেউবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে, জমি বন্ধক রেখে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু গত ১৭ আগস্ট সিস্টেম আপগ্রেডের কথা বলে গ্রাহকদের টাকা তোলার সেবা বন্ধ করে এমটিএফই।
এমটিএফই’র অ্যাপের মাধ্যমে এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে পরবর্তী মাস থেকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে পেতেন একজন বিনিয়োগকারী। এভাবে একজন থেকে আরেকজন অর্থাৎ যতজন বিনিয়োগ করবেন আগের ব্যক্তি তত বেশি লাভ পাবেন ভিত্তিতে এমটিএফই অফার দিতো।
Leave a Reply