কেউ মারা গেলে অপর মুসলিমের জন্য তার জানাজা কাফন-দাফন করা আবশ্যক। জীবিতের কাছে এসব মৃত ব্যক্তির হক।
এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রা.-কে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে আলী! তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না। ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোন অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোন উপযুক্ত পাত্র পাবে তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না।’ -(তিরমিজি ১/২০৬)
আত্মীয়-স্বজন, আপনজন কিংবা কাছের ও পরিচিত কেউ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে, মানুষ কষ্টে ব্যথাতুর হয়। তার স্মৃতি মনে করে কষ্ট পায়। মৃতকে স্মরণ করে বিলাপ ছাড়া কান্নাকাটি করা, চোখে পানি আসা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে এসব মৃতের কোনো উপকারে আসে না। এজন্য মৃত ব্যক্তির পরকালের জীবনে উপকার বয়ে আনে এমন কিছু করা উচিত স্বজনদের। মৃতদের উপকার দেয় এমন কিছু আমল হলো-
মৃত ব্যক্তির ভালো কাজের আলোচনা
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (আবু দাউদ, হাদিস, ৪৯০০)
তাদের জন্য দোয়া-মাগফিরাত করা
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহর নবী ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া বর্ণিত হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ঈমানদারকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত, ৪১)
অন্য জায়গায় নূহ আলাইহিস সালামের এ দোয়া বর্ণিত হয়েছে,‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং যে ঈমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও।’ (সুরা নুহ, আয়াত, ২৮)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমলের ফায়দা ভোগ করে—সদকায়ে জারিয়া; এমন জ্ঞান, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (মুসলিম, হাদিস, ১৬৩১)
তাদের উদ্দেশ্যে দান-সদকা করা
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম।’ (বুখারি, হাদিস, ২৭৫৬)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করে, আমার পিতা ইন্তেকাল করেছেন এবং ধন-সম্পদ রেখে গেছেন কিন্তু অসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার (গোনাহের) কাফফারা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (মুসলিম, হাদিস, ১৬৩০)
কবর জিয়ারত করা
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি এর আগে তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, তবে এখন থেকে অনুমতি দিলাম, তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা তা তোমাদের দুনিয়াবিমুখ করে এবং পরকালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৫৭১)
হাদিসে বর্ণিত কবর জিয়ারতের একটি দোয়া এরকম, (অর্থ) ‘এই কবরস্থানের বাসিন্দা মুসলিম-মুমিনদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের প্রতি আল্লাহ রহম করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও আপনাদের সাথে মিলিত হব।’ (মুসলিম, হাদিস, ৯৭৪)
Leave a Reply