দৈনিক শিক্ষা নিউজ ডেস্ক : মিডিয়া কভারেজ পেতে বিএনপি আন্দোলনে সিচুয়েশন তৈরি করে উল্লেখ করে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে কাউকে কিছু বলবে না। হ্যাঁ, আমি পুলিশকে বলেছি কিছু না বলার জন্য এটা ঠিক। আমি তো আন্দোলন করার কথা বলেছি। মিছিল করেন, আন্দোলন করেন শান্তিপূর্ণভাবে, কেউ কিছু বলবে না। যেখানে শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে সেখানে তো কেউ কিছু বলছে না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। এর আগে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার তথ্য তুলে ধরে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। তার জবাবে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রুমিন ফারহানা বলে গেল খুব খারাপ নাকি অবস্থা। ভোলার ঘটনা নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে গেল, প্রতিবাদ করে গেছে। বাংলাদেশে কী হতো? পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যা করা হলো, খুনিদের আরও উৎসাহিত করা হলো। বিচারের হাত থেকে রেহাই দেওয়া হলো। বিরোধী দল আন্দোলন করবে, হ্যাঁ আমি বলেছি পুলিশকে, যে কিছু না বলার জন্য; এটা ঠিক। কিন্তু পুলিশ তো আগ বাড়িয়ে কিছু করেনি। যেকোনো একটা মানুষ যদি আক্রান্ত হয় তার নিজেকে বাঁচাবার অধিকার আছে। সেটা কি নাই? না পুলিশ হলে তারা আক্রান্ত হলেও তার নিজেকে রক্ষা করার কোনো অধিকার থাকবে না?’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে সংসদ নেতা বলেন, ‘তাদের কথায় মনে হয়, তারা বোমা ছুড়বে, লাঠি মারবে, ঢিল মারবে, গুলি করবে সব করবে তাদের কিছু বলা যাবে না। আমি তো আন্দোলন করার কথা বলেছি, মিছিল করেন, আন্দোলন করেন। শান্তিপূর্ণভাবে করলে কেউ কিছু বলবে না। যেখানে শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে সেখানে তো কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু এরা তো মাঠে নেমেই আগে কোথায় কাকে আক্রমণ করবে, কীভাবে একটা সিচুয়েশন তৈরি করবে… হ্যাঁ এটা করে, একটা কারণ আছে, কারণ হলো এমনি মিছিল করলে তো মিডিয়া কভারেজ পাবে না। মিডিয়াতে কভারেজ করার জন্যই তারা এমন ঘটনা ঘটাবে যেন তারা একটু ইয়ে (কভারেজ) পায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন গুম, খুন হত্যা নিয়ে কথা হয়। বাংলাদেশে পঁচাত্তরের পর কী ঘটেছে। পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বরিশালের আগৈলঝাড়া, গৌরনদী থেকে ২৫ হাজার লোক টুঙ্গিপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ডিজেল বেশি দামে কিনে অল্প মূল্যে দিচ্ছি। প্রত্যেকটা খাতে আমরা দিচ্ছি, কারণ কৃষক উৎপাদনটা বাড়াবে। অর্থনীতির প্রত্যেকটা খাতে ভর্তুকি দিচ্ছি, যারা সাধারণ মানুষ তাদের জন্য। যারা উচ্চবিত্ত তারা হয়তো একটু অখুশি হতে পারেন। সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয় সেদিকেই বেশি দৃষ্টি দিয়ে থাকি, এটাই আমার নীতি এবং সেটাই আমি করে যাচ্ছি। হতাশাব্যঞ্জক কথা ছড়িয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো সেটা মোটেই সমুচিত নয়।’
এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না-প্রধানমন্ত্রী : দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা রোধে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের পথ বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমরা জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আমরা চাই বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন। গ্রামের মানুষ যেন সব সুবিধা পায়, শহরমুখী যেন না হয়, সেজন্য কাজ করছি। সেখানে যেন কর্মসংস্থান হয়, সেভাবেই আমরা নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি। এর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় যা যা করা প্রয়োজন তা করছি। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। কৃষিজ উৎপাদন বাড়াতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইডিইবি) তিন দিনব্যাপী ২৪তম জাতীয় সম্মেলন ও ৪৩তম কাউন্সিল অধিবেশন উদ্বোধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমডিজি বাস্তবায়ন করে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছি। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন দরকার। প্রযুক্তির এ যুগে যে পরিবর্তন আসবে সেজন্য দক্ষ জনশক্তিরও প্রয়োজন। তাই কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। আগামী প্রজন্মকে কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতার নির্দেশে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন। ২১ বছর পর সরকারে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমিও কাজ শুরু করি। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ যেন উন্নয়নের স্বাদ পায় সেজন্য কাজ করছি।’
‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা দেশকে নতুন স্তরে নিতে চেয়েছি’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দারিদ্র্যসীমা ২০ শতাংশে এনেছি। করোনার মধ্যেও জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯ শতাংশে উঠে আসে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ও আমাদের উন্নয়নকাজে প্রভাব পড়েছে। তবে এই অবস্থা মোকাবিলায় উৎপাদন বাড়াতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। কৃষিজ উৎপাদন বাড়াতে হবে। যাতে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির প্রভাব না পড়ে। কিছু খাবার নিজেরা উৎপাদন করতে পারলে বাজারে চাপ পড়বে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করছি। তরুণ প্রজন্ম সে সময়ের কারিগর হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, এতে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। ডেল্টা প্ল্যান অনুযায়ী আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
নোবেল পুরস্কার পাওয়া একজন ব্যক্তি পদ্মা সেতু তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকার জন্য পদ্মা সেতু নিয়ে একজন নোবেল পাওয়া ব্যক্তি ষড়যন্ত্র করেছেন, বিভিন্ন পক্ষকে দিয়ে হুমকি দিয়েছেন। ষড়যন্ত্রের একপর্যায়ে সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়। তখনই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বানানোর কথা বলেছিলাম।’ সেতুর নির্মাণকাজে জড়িত সব ইঞ্জিনিয়ার ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিকসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সবাইকে সতর্ক ও সাবধান হয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজ প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও রেশনিং করা হচ্ছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, মিতব্যয়ী হতে হবে, সঞ্চয়ী হতে হবে। খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে।’
দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আপনাদের সব ধরনের দাবি ও সমস্যার সমাধান করা হবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, আইডিইবির সভাপতি এ কে এম এ হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আইডিইবির তিন বরেণ্য সদস্য প্রকৌশলীকে স্বর্ণপদক ও সম্মাননা দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। সম্মাননা পাওয়া তিনজন হলেন বীরপ্রতীক এম এ হালিম, ফজলুল করিম খান ও মোহাম্মদ আলী।
‘জাতীয় সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্যে এবারের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনকে ১২টি কর্ম অধিবেশনে ভাগ করেছে আইডিইবি।
Leave a Reply