রাজধানীর কলাবাগানে হেনা (৮) নামের এক শিশু গৃহকর্মীকে হত্যার ঘটনায় গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। একই সাথে এ ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করে এ ধরনের ঘটনা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, হেনা ময়মনসিংহ মুক্তগাছা উপজেলা নন্দীবাড়ি গ্রামের মৃত হক মিয়া ও মৃত হাসিনা বেগমের মেয়ে। গত তিন বছর আগে গৃহকর্ত্রী সাথী আক্তার পারভীন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় একটি ট্রেনিং এ যান। সেখানে হেনাকে দেখে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তাকে ঢাকায়ে নিয়ে আসেন সাথী আক্তার। স্বজনদের সেইসময় গৃহকর্ত্রী সাথী বলেছিলেন, হেনাকে তার নিজের সন্তানের মত করে রাখবেন এবং মাস শেষে ২ হাজার টাকা করে হেনার ফুফুর কাছে পাঠাবে। চার মাস এভাবে টাকা পাঠালেও এরপর থেকে আর কোনো টাকা পাঠাননি। জানতে চাইলে তিনি জানান হেনার জন্য টাকা আলাদা ভাবে জমিয়ে রাখছেন। গত ২৬ আগস্ট দুপুরে কলাবাগানের ভূতের গলির একটি বাসা থেকে ওই শিশু গৃহকর্মী হেনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশের সুরতহাল দেখে ধারণা করা হচ্ছে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও স্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে। এতে সাথি আক্তার পারভীনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকে অভিযুক্তকে খুঁজছে পুলিশ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গৃহকর্মে নিযুক্ত শ্রমিকের উপর নির্যাতন, হত্যা, ও মানবাধিকার লংঘনের মতো প্রভৃতি ঘটনা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গেছে। গৃহশ্রমিক হিসেবে যেমন তাদের রয়েছে কিছু ন্যায্য অধিকার তেমনি রয়েছে মানুষ হিসাবে মর্যাদা পাবার অধিকার। দেশব্যাপী গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষায় প্রণীত গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ বাস্তবায়ন না হওয়া এবং গৃহশ্রমিকদের শ্রম আইনে অন্তভূক্ত না হওয়ায় দেশে একের পর এক গৃহশ্রমিকের মৃত্যু ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বিচারহীনতার কারণে দোষীরা বার বার গৃহশ্রমিকদের উপর নির্যাতনের সাহস পায়। যদি এসব ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে সেই ভয়ে আর কেউ গৃহশ্রমিকদের নির্যাতনের সাহস দেখাবে না। সুতরাং এই ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিকে দ্রæত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্ক।
Leave a Reply