দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল বিকালে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করে নাম ঠিকানাসহ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়া বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন রাষ্ট্রপতিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর মো. সাহাবুদ্দিন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমি সুষ্ঠু নির্বাচন দেখে যেতে চাই।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার স্বার্থে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব। সেখানে যদি ক্ষমতাসীন দল ভিকটিমাইজ হয় হতে পারে। ’ গণমাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল রাষ্ট্রপতি পদের মনোনয়নপত্র পরীক্ষা শেষে একমাত্র প্রার্থী সাহাবুদ্দিনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
এরপর বিকালে নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। মনোনয়নপত্র পরীক্ষা শেষে সিইসি বলেন, দুটি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল একই প্রার্থীর নামে। এর মধ্যে একটি পরিপূর্ণভাবে বৈধ হওয়ায় অন্যটি আর গ্রহণের দরকার পড়েনি। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর প্রস্তাবক আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সমর্থক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন হবেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করা মো. সাহাবুদ্দিন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরে যান। ব্যক্তিজীবনে তিনি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু নামেই বেশি পরিচিত।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, তা নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রবিবার মো. সাহাবুদ্দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেন। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তার নির্বাচিত হওয়া ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার। আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির সভায় রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ভার দেওয়া হয় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ওপর। শেষ পর্যন্ত তিনি বেছে নেন মো. সাহাবুদ্দিনকে, যিনি কৈশোরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদে পরোক্ষ ভোটে। সংসদ সদস্যরাই এই নির্বাচনে ভোট দেন। তবে মো. সাহাবুদ্দিন একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় ভোটাভুটির প্রয়োজন আর পড়ল না। সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একবারই সংসদের কক্ষে ভোট করতে হয়েছিল। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। স্বাধীনতার পর থেকে ২১ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৭ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ প্রান্তে রয়েছেন। সেই হিসাবে নতুন রাষ্ট্রপতি হবেন এই পদে অষ্টদশ ব্যক্তি।
ইসির প্রজ্ঞাপন জারি : রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে নাম ঠিকানাসহ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী নির্বাচন কর্তা ও নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণা মোতাবেক জনাব মো. সাহাবুদ্দিন, পিতা-মরহুম শরফুদ্দিন আনছারী, বাসা/হোল্ডিং-৮৮/১, গ্রাম/রাস্তা : শিবরামপুর, পাবনা পৌরসভা, ডাকঘর-পাবনা, পোস্টকোড-৬৬০০, উপজেলা-পাবনা সদর, জেলা-পাবনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ’ ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গেজেট প্রকাশের পর তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যথাসময়ে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির শপথের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
Leave a Reply