জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণ ও স্বৈরাচারবিরোধী একটি গ্রাফিতি এঁকেছে জাবি সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ জ্ঞাপন এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
রোববার শিক্ষক সমিতির নির্বাহী পরিষদের সভা শেষে উপাচার্য বরাবর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
এছাড়া এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যেও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারাও জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের নতুন ভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি প্রতিকৃতি আঁকা ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বহিরাগত নারী ধর্ষণের ঘটনার পর সেই স্থানে গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি মুছে একটি গ্রাফিতি অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতাকর্মীরা। এ অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন ৪৭ ব্যাচের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অমর্ত্য রায় ও ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী।
তাদের দাবি, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জোগাতে এবং নিপীড়কদের হুঁশিয়ার করতে নতুন গ্রাফিতিটি আঁকা হয়েছে। প্রায় তিন বছর পার হওয়ায় আগের ছবি অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া পাশের দেয়ালে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিশাল, স্পষ্ট এবং নান্দনিক গ্রাফিতি দৃশ্যমান রয়েছে। চলমান ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতার ভিত্তিতে গ্রাফিতি অঙ্গন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।’
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে ফেলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের সময়ে অত্যন্ত হীনম্মন্যতা নিয়ে রাতের আঁধারে এ নিকৃষ্ট কাণ্ডটি নিপীড়কদের রক্ষাকারী বা রক্ষার চেষ্টায় তৎপর কুচক্রীমহলের পরিকল্পনায় ঘটানো হয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে উপাচার্য বরাবর সশরীরে উপস্থিত হয়ে দাবি জানিয়েছি। তিনি তদন্ত কমিটি করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’
অপরদিকে, এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আইনি ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং উক্ত স্থানে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতির পিতার প্রতিকৃতি পুনরায় প্রতিস্থাপনের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দেয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে ছাত্রলীগের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও নেওয়া হয়নি ব্যবস্থা। এছাড়া স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর থেকে অনেকটাই নীরব অবস্থানে রয়েছে শাখা ছাত্রলীগ।
শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক বলেন, ‘এখানে শুধু বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছা হয় নাই, এখানে জাতির পিতার কন্যাকেও বিকৃত করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা উপাচার্য বরাবর জড়িতদের বিচার দাবি জানিয়েছি; কিন্তু প্রশাসন আমাদের আলটিমেটাম রাখেনি। মঙ্গলবার কর্মসূচির পর যদি প্রশাসন দাবির বাস্তবায়ন না করে তাহলে ছাত্রলীগ নিজের ব্যবস্থা নিজেই নেবে।’
এদিকে শাখা ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী জানিয়েছেন, তারা সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে গ্রাফিতিটি মুছে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন; কিন্তু তিনি তা করেননি। এছাড়া ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি গঠনের দাবিও জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিক দাবিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতির পিতার প্রতিকৃতি মুছে ফেলেছে। গ্রাফিতির নিচে যারা এঁকেছে তাদের পরিচয় দেওয়া আছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। মঙ্গলবার গণজমায়েত ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছি। এরপর আমরা কঠোর অবস্থানে যাব।’
তদন্ত কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘যারা এটি করেছে তাদের শনাক্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে বলেছি। এরপর ডিসিপ্লিনারি বোর্ডে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
Leave a Reply