নজরদারি থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক খেলাপি ঋণে কিছুতেই কমছে না। এসব ব্যাংকের খেলাপি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বাড়িয়েছে নজরদারি। তবে কিছুতেই কমছে না ব্যাংকগুলোর খেলাপি আদায়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এসব ব্যাংকের খেলাপি ১০ শতাংশের নিচে আনতে শর্ত আরোপ করেছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বর্তমানে খেলাপি রয়েছে ২৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি শর্তের ৫ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে মার্চ-জুন প্রান্তিকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। আর খেলাপি ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। আর রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৪ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এসব ব্যাংকের তার আগের বছরে বিতরণ করা ঋণ ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার ৭২ কোটি টাকা। তার মধ্যে খেলাপি ছিল ৫৫ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ১২ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ৮ হাজার ২৫ কোটি, যা মোট ঋণের ৬২ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং এটি সরকারি ব্যাংকের খেলাপি হারের রেকর্ড।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) মোট ঋণ ২ হাজার ২০৬ কোটি টাকা এবং খেলাপি ৯১৮ কোটি টাকা। খেলাপির হার ৪৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। একইভাবে জনতা ব্যাংকের মোট ঋণ ৮৭ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা এবং খেলাপি ২৮ হাজার ৫৪২ কোটি। এখানে খেলাপির হার ৩২ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
খেলাপির খাতায় ১৬ হাজার ৪৯৫ কোটি বা ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণ ৭০ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আর বিতরণ করা ৪২ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ খেলাপি নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। তবে সোনালী ব্যাংকের বিতরণ করা ৮২ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ১২ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আফজাল করিম বলেন, খেলাপি একটা বড় সমস্যা। সরকারি ব্যাংকের খেলাপি কমাতে এমওইউ করা হয়েছে। তবে খেলাপি কমছে না। এটা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
এবিষয়ে অর্থনীতি বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বিশেষ যোগসাজশে ঋণের কবলে পড়েছে ব্যাংক খাত। খেলাপিদের বিশেষ ছাড় বন্ধ না হলে খেলাপি আরও লাগামহীন হয়ে পড়বে। অধিকাংশ ব্যাংকে ঋণ খাতা-কলমে দেখানো হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর ঋণ কমানোর শর্ত আইএমএফ দিলেও উল্টো বেড়ে যাচ্ছে, যা সামনে অন্ধকার ডেকে আনবে।
Leave a Reply