দৈনিক শিক্ষা নিউজ লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পড়া না পারায় প্রায় ৩০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে কান ধরিয়ে দীর্ঘ সময় রোদে দাঁড় করিয়ে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এর বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে বলা হয়, গত বুধবার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সোহাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্যাতনের ওই ঘটনা ঘটে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন নাহার গত মঙ্গলবার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বইয়ের দুই পৃষ্ঠা পড়া মুখস্থ করে পরদিন আসতে বলেন। পরদিন প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী ওই পড়া মুখস্থ বলতে না পারলে তাদের বেত দিয়ে পিটুনির পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের বাইরে প্রায় ৪০ মিনিট রোদে কান ধরে দাঁড় করে রাখেন শিক্ষক জান্নাতুন নাহার। বিদ্যালয় ছুটির পর শিক্ষার্থীরা বাড়িতে গিয়ে এ ঘটনা বাবা-মা ও অভিভাবকদের জানিয়ে বিদ্যালয়ের আর পড়তে যাবে না বলে জানায়। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের তৈরি হয়। গতকাল সকালে অভিভাবকদের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়। অভিযোগের অনুলিপি রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপপরিচালক, জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং পাটগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরেও দেওয়া হয়।
সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুন নাহার বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামের স্ত্রী। নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়ে শিক্ষার্থী লাবণ্য আক্তার গনমাধ্যমকে বলে, ‘ক্লাসে আপা এসে পড়া চান। এতগুলো পড়া মুখস্থ দিতে পারিনি। এজন্য কান ধরে রোদে দাঁড় করে রাখেন। এছাড়া স্কেল দিয়ে আমাকে এবং বৈশাখী, সুমাইয়া, হাবিবা, মাইশা, হুসনুত ও সাইয়েদাকে মারধর করেছেন। এরকম করায় আজকে (গতকাল বৃহস্পতিবার) কেউ বিদ্যালয়ে যায়নি। দুজন গেছে, তারাও পরে ছুটি নিয়ে চলে আসে।’
ভুক্তভোগী আরেক শিশু শিক্ষার্থী মাইশা আক্তার। তার মা মুন্নি আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে গনমাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়েটাকে (মাইশা) মারধর করে, কান ধরে রাখার কারণে সে রাতে ভাত খায়নি। আজ (বৃহস্পতিবার) স্কুলেও যায়নি।’
অভিভাবকদের অভিযোগের বিষয়টি জানার পর গতকাল সোহাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পঞ্চম শ্রেণির কোনো ছাত্রছাত্রীকে পাওয়া যায়নি।
নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুন নাহার বলেন, ‘একটা পড়া পাঁচ দিন থেকে বাচ্চাদের পড়াচ্ছি। প্রশ্ন দিয়েছি, পরপর পড়াচ্ছি, কিন্তু কোনো ডেভেলপ (উন্নতি) হচ্ছে না। তখন বাচ্চাদের প্রশ্ন করি, কেন পড়া হচ্ছে না। তখন সবাই একসঙ্গে বলল মার দিতে। আমি বলছি মারা যাবে না। তারাই বলল কান ধরি। আমি কান ধরিয়ে বারান্দায় ১০ মিনিট রেখেছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল কবির বলেন, ‘বুধবার তো বেশি রোদ ছিল না। বারান্দায় কিছু সময় শিক্ষার্থীদের দাঁড় করে রেখেছিলেন। উনি (সহকারী শিক্ষিকা জান্নাতুন নাহার) ভুল স্বীকার করেছেন।’
এ প্রসঙ্গে পাটগ্রাম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (টিও) আবুল হোসেন অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগ পাওয়া কথা জানিয়ে বলেন, ‘তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Leave a Reply